গলার কাঁটা হয়ে আছে সিলেটের ইফতার প্রথা

ফাইল : ছবি

দে শের বিভিন্ন জনপদে নানা ঐতিহ্য ও প্রথার প্রচলন আছে। যুগ যুগ ধরে স্থানীয়রা এসব প্রথা টিকিয়ে রেখেছেন বংশ পরম্পরায়। এরমধ্যে কিছু আছে ঐতিহ্যের অংশ হয়ে। আবার কিছু প্রথা গলার কাঁটার মতোই বিঁধে আছে। সহসা যা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

এই রমজানে তেমনই একটি প্রথা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। সেটি হলো মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইফতার পাঠানোর পচলন। এটি আবার যেনতেনভাবে করলেই হবে না। কারণ ইফতারের পরিমাণ, আইটেম ও বৈচিত্র্যের সাথে জড়িত থাকে উভয়পক্ষের মান-মর্যাদার প্রশ্ন।

এ কারণে প্রতি বছর রমজানের ২-৩ মাস আগে থেকেই অনেক বাবাকে চিন্তা করতে হয় কী করে মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানোর টাকা জোগাড় করা যাবে। অনেক বাবা ইফতারের এই আয়োজনের জন্য নিজের গরু ছাগল এমনকি হাস মুরগিও বিক্রি করেন। সুদে টাকা এনে তা মেটাতে বছর পার করেছেন অনেকেই।

ইফতার শুধু মেয়ের বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ছেলের শ্বশুড়বাড়ি থেকে যেদিন ইফতার আসবে সেদিন বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেয়া হয়। সেই সাথে একটি নীরব প্রতিযোগিতা চলে- কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কত বেশি আইটেমের ইফতার এলো। কে তার শ্বশুরবাড়ির ইফতার কয়শ মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালো।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই প্রথার অবসান চায় নতুন প্রজন্ম। নতুন প্রজন্ম একে জুলুম হিসেবে দেখছে। এই ইফতার নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। বাবার বাড়ি থেকে মনমত ইফতার না আসলে শ্বশুড়বাড়ির মানুষের থেকে নানা কটু কথা শুনতে হয়। হয়তো মেয়ে জানে তার বাবার আর্থিক অবস্থা। হয়তো ইফতার দেয়ার মত সামর্থ্য তার বাবার নেই। কিন্তু নিজের বাবার সম্মানের কথা ভেবে, শ্বশুরবাড়িতে নিজের সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখতে অনেক সময় ভেতরে চাপা কষ্ট নিয়ে মেয়েও বাবাকে অনুরোধ করে। মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন না বাবা। যেভাবেই হোক টাকা সংগ্রহ করেন।

এমন প্রথা ইসলামে নেই জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল জানান, ইসলামে এমন কোনো বিধান নেই। সংযমের মাসে কারো ওপর জোর করে ইফতারের আয়োজন চাপিয়ে দেয়া অন্যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন